লোভী ডাক্তার?

একটা পাবলিক পরীক্ষার সৃজনশীল প্রশ্নে 'লোভী ডাক্তার' বিষয়টি নিয়ে বেশ তর্ক বিতর্ক হচ্ছে। একটি সৃজনশীল প্রশ্নের উদ্দীপক দেয়া হয়েছে এমনঃ "জাহেদ সাহেব একজন লোভী ডাক্তার। অভাব ও দারিদ্র বিমোচন করতে গিয়ে তিনি সব সময় অর্থের পিছনে ছুটতেন। এক সময় গাড়ি-বাড়ি, ধন-সম্পদ সব কিছুর মালিক হন। তবুও তার চাওয়া পাওয়ার শেষ নেই। অর্থ উপার্জনই তার একমাত্র নেশা। অন্যদিকে তাঁর বন্ধু সগীর সাহেব তাঁর ধন-সম্পদ থেকে বিভিন্ন সামাজিক জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করেন। তিনি মনে করেন, সুন্দরভাবে জীবনযাপনের জন্য বেশি সম্পদের প্রয়োজন নেই।"


প্রশ্নে এটি দেওয়া ঠিক হয়েছে নাকি ঠিক হয়নি সেটা নির্ধারণ করা যথেষ্টই কঠিন। উচিৎ অনুচিত উভয় পক্ষেই যথেষ্ট যুক্তি দেওয়া যায়। তবে বিপক্ষের পাল্লাই ভারী।

ডাক্তারদের লোভী হিসেবে উপস্থাপন করলে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ডাক্তারদের সমন্ধেই একটা খারাপ ধারণা জন্ম নিবে। এতে তারা একদিকে যেমন এই পেশার প্রতি আগ্রহ হারাবে, ডাক্তারের কাছে যেতে আস্থা পাবে না অন্যদিকে ডাক্তারদের লোভ বিষয়টাকে তাদের কাছে সাধারণ মনে হবে।

কিন্তু এটা অস্বীকার করার উপায় নেই ডাক্তারদের মধ্যে খুব কম সংখ্যাক হলেও লোভী। অপ্রিয় সত্য কথা। তাহলে, অপ্রিয় হলেই কি সত্য কথা সেখানো উচিৎ নয় শিক্ষার্থীদের? প্রাকটীক্যাল সত্য না জানলে তো বাস্তব জীবনে কেউ ভাল করতে পারবে না।

আমরা প্রায়ই দেখি ছাত্রজীবনে আমরা থিওরীতে যা পড়ি বাস্তব বা প্রাকটিক্যাল জীবনে তার অনেক কিছুই অন্য রকম। ভালো ছাত্ররা বইয়ের জ্ঞান ভালোভাবে রপ্ত করে বলেই, তাদের বাস্তব জ্ঞান অনেক কম থাকে। ফলে, ছাত্রজীবনে যাদের রেজাল্ট খারাপ বাস্তব জীবনে তারাই সমাজের সবচেয়ে উপরের স্থানগুলো দখল করে। এই কারণে বর্তমান যুগে, শিক্ষাকে বাস্তবমুখী করার কথা বলেন অনেকে। অর্থাৎ, প্রিয়-অপ্রিয় যাই হোক সব বাস্তব ধারণাই শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ। পশ্চিমা বিশ্বে, এটাকেই বলে ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন। এই যুক্তির মাধ্যমেই নাৎসিদের দর্শন পাঠদানে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়।

কিন্তু কথা হচ্ছে কতটুকু বাস্তব জ্ঞান শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেওয়া দরকার এবং কিভাবে দেওয়া দরকার। আমার ব্যক্তিগত ধারণা হচ্ছে এবং হয়ত অনেক শিক্ষানীত এটাই অনুসরণ করে, ছোট ক্লাসে বাচ্চাদেরকে সবকিছুর একদম বেসিক ধারণা দেওয়া উচিৎ। যেমন-সদা সত্য কথা বলিবে। এরকম। কিন্তু যখন ধীরে ধীরে যখন বয়স বাড়বে শিক্ষাটা হতে হবে ধীরে ধীরে বাস্তবমুখী। যেমন- বিষয় সময়ে সত্য না বলে চুপ থাকা শ্রেয় হতে পারে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দিতে হবে পুরো বাস্তব শিক্ষা। মানুষ কখন সত্য বলে, কখন মিথ্যা বলে। কখন আংশিক মিথ্যা কিভাবে ব্যবহৃত হয় ইত্যাদি। মানে ঐ বিষয়ের যত বাস্তব এপ্লিকেশন সম্ভব আরকি।

সেই হিসাবে স্কুলের প্রশ্নে সমাজের সকল প্রাকটিক্যাল ব্যাপার খোলাখুলি তুলে ধরার দরকার নেই। কারণ ভালোর আগে খারাপটা শিখলে খারাপটাকেই স্বাভাবিক মনে হবে। লোভী ডাক্তার কথাটা এত ছোট বয়সে মনে গেথে গেলে সেটাকেই স্বাভাবিক মনে হবে।

তবে হ্যা সমাজে কি আছে সব কিছুই শিখতে হবে। তবে সঠিক ভাবে এবং সঠিক বয়সে।

আলোচ্য প্রশ্নে দুইজন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একজন ডাক্তার আর একজন অন্য পেশার। কিন্তু ডাক্তারকেই লোভী বলা হয়েছে। এর থেকে ভালো হত যদি উক্ত দুইজন মানুষের পেশা একই হত। একজন লোভী আর একজন লোভী নয়। তখন শিক্ষার্থিদের বিশ্লেষণ করতে হত দুইজন মানুষের পেশা একই হলেও তাদের নীতি আলাদা কেন। এতে করে প্রশ্নের আসল উদ্দেশ্য সফল হত।

মঞ্জিলুর রহমান
সামারটাউন, অক্সফোর্ড

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on FacebookTweet on TwitterPlus on Google+