স্টিফেন হকিংঃ একজন সাহসী অভিযাত্রীর প্রস্থান

তখন সম্ভবত ক্লাস সেভেনে পড়ি। ২০০২ সালের কথা। ভাইয়ার কাছে শুনেছিলাম পৃথিবীর সেরা বিজ্ঞানী নড়াচড়া করতে পারেনা। শুধুমাত্র একটা আঙ্গুল নাড়িয়ে হুইল চেয়ারের সাহায্যে চলাফেরা করে। বিষয়টা আমাকে অনেক ভাবিয়েছিল। আমি সুস্থ সবল মানুষ হয়েও কিছু করতে পারি না আর কেউ কিনা পক্ষাঘাতগ্রস্থ শরীর নিয়েও সেরা বিজ্ঞানী! একারণে তার সমন্ধে আমার আগ্রহ তৈরি হয়। বিজ্ঞানীটির নাম স্টিফেন হকিং। বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী।


বিজ্ঞানে আমার যত আগ্রহ তার অন্যতম কারণ ছিল স্টিফেন হকিং। ক্লাস নাইনে থাকতে ভাইয়া হকিং এর কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম) বইটি উপহার দেয় তার চাকরির প্রথম বেতন পাওয়া উপলক্ষে। ক্লাস নাইনের পুরো সামার ভ্যাকেশন আমি এই বইয়ের উপর বুদ হয়ে ছিলাম।

প্রতিদিন দুপুর বেলা বইটি পড়া শুরু করতাম। এরপর পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে যেতাম। সবকিছু যে বুঝতাম তা না। কিন্তু পড়ে যেতাম। এভাবে আমি জানতে পারি মহাবিশ্ব কি দিয়ে তৈরি, সেগুলো কিভাবে সৃষ্টি হয় এই সব বিষয়ে তত্ত্ব। পড়তাম আর অবাক হয়ে যেতাম আমাদের জগত কত আশ্চর্য সেটা ভেবে।

নিজের জগতকে ভিন্নভাবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বুঝতে পারি জগত নিয়ে ভাবার কাজটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেখান থেকেই বিজ্ঞানী হওয়ার ইচ্ছা আমার মধ্যে দৃঢ় হতে থাকে। ইন্টারমেডিয়েটে উঠতে উঠতেই তাই সিদ্ধান্ত নেই বিজ্ঞানী হব।

এইভাবে স্টিফেন হকিং এর একটা বই আমার সারা জীবন বদলে দেয়।

গতকাল ১৪ মার্চ তিনি মারা গেছেন।

১৪ মার্চ কে বলা হয় পাই দিবস। কারণ পাই এর মান ৩.১৪ কে আমেরিকান সিস্টেমে তারিখ হিসেবে লেখলে (অর্থাৎ মাস/দিন) এই তারিখটি পাওয়া যায়। অনেকেই ১৪ মার্চকে সবচেয়ে সুন্দর তারিখ বলে। সেই তারিখে অসাধারণ বিজ্ঞানীটি আমাদের ছেড়ে গেলেন।

আইনস্টাইনের জন্মদিনও কিন্তু পাই দিবসে।

স্টিফেন হকিং অনেক কম বয়স থেকে মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত। ডাক্তাররা বলেছিল তিনি ২২ বছর বয়সেই মারা যাবেন। কিন্তু দুরারোগ্য ব্যাধির কাছে তিনি হার মানেননি। লড়াই করে গেছেন। শুধু যে ব্যাধির সাথে যুদ্ধ করেছেন তাই না, বরং বিজ্ঞানের গবেষণা করে গেছেন জীবন ব্যপী। শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্থ হলেও তার মস্তিষ্ক দিয়েই চিন্তার মাধ্যমে করে গেছেন সব গবেষণা। উদ্দীপনা আর অধ্যবসায় দিয়ে তিনি জয় করেছেন ব্যাধিকে।

তাই আজীবন জয়ী এই বীরের প্রস্থান আমাদের শোকাহত নয় বরং আরও উৎসাহিত করে। উৎসাহিত করে বিজ্ঞানের প্রতি। উৎসাহিত করে জীবনের প্রতি।

মঞ্জিলুর রহমান
কিবল কলেজ, অক্সফোর্ড

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on FacebookTweet on TwitterPlus on Google+