"তোমার সবদিকে যখন অন্ধকার,
তখন চারপাশটা আর একবার একটু ভাল করে দেখ।
কারণ এমনো হতে পারে - অন্ধকারের মাঝে তুমিই আলো।"
--- জালাল উদ্দিন রুমী
গত দুই সপ্তাহের বাসন্তি আবহাওয়ার পর অক্সফোর্ড আবার মেঘলা। সকাল থেকে টুপুর টুপুর করে বৃষ্টি পরছে।
বৃষ্টি হলে প্রতিদিনের মত দৌড়াতে বা হাঁটতে যাওয়া হয় না।
তাই কফি খেতে খেতে দু'চার লাইন লেখি ফেসবুকে।
ইংল্যান্ডের বসন্ত কাল শুরু হয়ে যায় মার্চের শেষদিক থেকে। শীতে ন্যাড়া হয়ে যাওয়া গাছে একটা দুইটা পাতা গজাতে শুরু করে।
এপ্রিলে সবগাছই প্রায় সবুজ হয়ে যায়। পার্কগুলো আর রাস্তার ধারের ফুলগাছগুলো ফুলে ফুলে ভরে যায়।
সবার শুরুতেই ফোঁটা শুরু করে ড্যাফোডিল। পার্কের লন, বাসা-বাড়ির সামনে এবং কবরস্থান সবখানেই ড্যাফোডিলের দেখা মেলে।
ঘাসফুল গুলো ফোঁটা শুরু করে তার পরপরেই। ডেইজি, বাটারকার্প, ড্যান্ডিলায়ন আর স্পিডওয়েলে পার্কের লনগুলো ভরে যায়।
এরসাথে পার্কের কোনায় বা বাসা-বাড়ির বাগানে ফোঁটে টিউটিপ আর লাইলাক।
চেরীগাছগুলো ফুলেফুলে ভরে যায়। আপেল, ক্র্যাব আপেলও যোগ হয়ে এদের সাথে।
বৃক্ষ ধরণের গাছের মধ্যে বীচ, বার্চ আর চেস্টনাট গাছগুলোয় পাতা চলে আসে। চেস্টনাট গাছগুলোয় ফুল ফুটলে চারদিকের সৌন্দর্য অনেক বেড়ে যায়।
তাই রোদেলা দিনে ঘরের ভেতরে বসে থাকা কঠিন। আলতো রোদে প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটতে বা দৌঁড়াতে বের হয়। বাসায় থাকলেও বেশিরভাগ সময় ছাদে গিয়ে কাজ করি বা বই পড়ি। আমাদের ছাদ থেকে দেখা যায় অক্সফোর্ডের অনেকগুলো কলেজের দালান। প্রতিটা কলেজের দালানের শীর্ষে থাকে অনেকটা গম্বুজেরমত মোচাসদৃশ চূড়া। এক্সেটার, লিংকন, জিসাস, ট্রিনিটি আর ব্যালিওল কলেজের স্থাপত্য উপভোগ করার জন্য আমাদের ছাদ একটা দারুণ জায়গা।
আজ মেঘলা দিনেও নিজেকে তাই ভাগ্যবান মনে হয় এই ভেবে যে - বন্দীত্বের এই সময়েও জীবনটা তেমন খারাপ নয়।
সত্যি বলতে অনেক অন্ধকারের মধ্যেও খুঁজলে আলো পাওয়া যায়। কৃষ্ণ-গহ্বরেরও আলো থাকে।
খারাপ সময় নিজের চারপাশে ভাল করে একটু তাকালেই খুঁজে পাওয়া যায় সুখের চিহ্ন বা পরিতৃপ্তির আহ্লাদ।
মঞ্জিলুর রহমান
অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্য।