রোহিঙ্গা সমস্যা

১। আমাদের ভাগ্য এতটাই খারাপ যে, আমাদের দেশের মাত্র দুইটা প্রতিবেশী। তার মধ্যে একটা আগ্রাসী, অন্যটা অমানবিক।
 সব কিছু বদলানো যায়। কিন্তু প্রতিবেশী বদলানো যায়না। তাই, এই দুই প্রতিবেশীর প্রতি অতিরিক্ত প্রেম বা অতিরিক্ত ঘৃণা না দেখিয়ে তাদের সাথে ডিল করার উপায় আমাদেরকেই খূঁজে বের করতে হবে।
ভারত আমাদেরকে ঐতিহাসিকভাবে সাহায্য করেছে সেজন্য আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। সেই কৃতজ্ঞার প্রতিদান হিসেবে ভারত কোন বিপদে পরলে আমরা অবশ্যই এগিয়ে আসব। নিজেদের সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে সাহায্য করব। কিন্তু সেটা যেন আত্মসম্মান বিসর্জনের পর্যায়ে না যায়।

রোহিঙ্গারা বাঙালি জাতিসত্তা হতেই পারে। 'বাঙালি' পৃথিবীর ৩য় গরিষ্ট জাতিসত্তা। বাংলাদেশ বাদেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাঙালি জনগোষ্টীর বসবাস। তাই কেউ বাঙালি হলেই সে বাংলাদেশের এ দাবি অযৌক্তিক। তবে বাঙালি হিসেবে আমাদের (বাংলাদেশীদের) দায়িত্ব পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের বাঙালিদের দাবী আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা।

মায়ানমার যদি রাখাইন রাজ্য চালাতে না পারে, তাহলে তাদের উচিৎ এই রাজ্য চালানোর ভার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হাতে ছেড়ে দেওয়া।

২। মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশ আঞ্চলিক সমর্থন না পেলেও পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন পাবে। বিশেষ করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ যদি দেখাতে সক্ষম হয়, মিয়ানমারের মত দেশ ক্ষমতা পেলে কি করতে পারে, সেটা চীনের ব্যাপারেও সবাইকে একটু ভাবিয়ে তুলবে। কারণ রাষ্ট্র হিসেবে চীনের প্রকৃতি মিয়ানমার থেকে খুব একটা ভিন্ন নয়। চীন তিব্বতে একই রকম কাজ করছে, উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে সাহায্য করছে, আবার মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা নিধনে সমর্থন দিচ্ছে। চীন যদি ভবিষ্যৎ পৃথিবীর হোতা হয়, তবে সেই পৃথিবীতে তাদের জাতিসত্তা ছাড়া অন্য কোন জাতিসত্তার অস্তিত্ব তারা স্বীকার করবে কিনা সেটা ভেবে দেখার বিষয়।

ভারত এই ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন করবে না সংগত কারণেই। বাংলাদেশ যেহেতু চীনের সাথে সম্পর্ক জোড়ালো করছে এবং চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড নীতিকে সমর্থন করছে তাই ভারত কিছুটা নাখোশ। ভারতের অবস্থান অনেকটা এমন, আমাদের ছেড়ে চীনের সাথে থাকো, এখন বোঝ ঠেলা। তবে ভারতকে ছাড়াই আন্তর্জাতিক সমর্থনে রোহিঙ্গা বাঙালিদের সমস্যা সমাধান সম্ভব। বাংলাদেশ বেশিরভাগ বিবেকসম্পন্ন মানুষের সমর্থন পাবে কারণ আদর্শিক ভাবে বাংলাদেশের অবস্থান মানবিক। আর সেটা করতে পারলে দিন শেষে ভারত চীন দুই দেশই আমাদেরকে সমঝ করে চলবে।

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on FacebookTweet on TwitterPlus on Google+