কোটা, মুক্তিযুদ্ধ, নারীবাদ ও স্থানীয় উন্নয়ন

অনেকে কোটা বিরোধীতাকে মুক্তিযুদ্ধ বা নারীবাদের শত্রু হিসেবে দেখছেন। কিন্তু সবার বুঝতে হবে, চাকরিতে কোটা সিস্টেমে অনেক মৌলিক সমস্যা আছে যার সাথে মুক্তিযুদ্ধ বা নারীবাদের কোন সম্পর্ক নেই।

 

বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন অনেকটা সমাজতান্ত্রিক আদলে আমাদের অনেক সিস্টেম তৈরী হয়। যার মধ্যে কোটা ব্যবস্থা অন্যতম। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে এর কোন জায়গা নেই।

কোটা থাকার অর্থ হল, আপনি ধরে নিচ্ছেন সরকারী চাকরির জন্য সেরা লোকের প্রয়োজন নেই, যেমন তেমন একজন লোক হলেই হল। তাই সবচেয়ে বেশি যোগ্যতার ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে কোটায় লোক নেওয়া ঠিক আছে।

যারা কোটায় চাকরিতে ঢোকেন তারা নিজেরাই সারা জীবন হীনমন্যতায় ভোগেন। চাকরি হচ্ছে মানুষের মাথা উঁচু করার অন্যতম হাতিয়ার। চাকরিতে ঢুকে যদি সারাজীবন মাথা উঁচু করে থাকা না যায় তাহলে সেটা দুঃখজনক।

অনেকে যুক্তি দেন মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রশাসন গড়ে তুলতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সাহায্য করে। আসলেই কি তাই? মুক্তিযোদ্ধার অনেক ছেলে-মেয়েই কি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী দল জামায়াত-ই-ইসলামী বা তাদের ছাত্র সংগঠনে যোগ দেয়না?

একটা উদাহরণ দেই। ধরেন একজন মুক্তিযোদ্ধা তার মেয়েকে একজন রাজাকারের ছেলের সাথে বিয়ে দিলেন। এখন, তাদের নাতি-নাতনি হলে তারা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাবেন যদিও তারা রাজাকারের নাতি-নাতনি।

মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কোটা ব্যবস্থার কারণে দেশের মৌলিক ভিত্তি ধ্বংস হোক এটা কোন মুক্তিযোদ্ধা চাইতেন বলে আমার মনে হয়না।

নারীকোটা নিয়ে কথা বলা আরও স্পর্শকাতর। উপরের অনেক যুক্তি নারীকোটার ক্ষেত্রেও খাটে।

নারীশিক্ষায় প্রণোদনা দেওয়া হোক যাতে প্রত্যেক নারী প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে পারে। যেটা ইতোমধ্যে সব সেক্টরে শুরু হয়ে গেছে। নারীরা প্রতিযোগিতা করেই এগিয়ে যাচ্ছে। প্রান্তিক নারীদের জন্য প্রণোদনা আরও বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ পাওয়ার পরে চাকরিতে কোটা থাকার কোন প্রয়োজন নেই।

এমনকি জেলা কোটা বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটার ও মনে হয়না দরকার আছে। স্থানীয় উন্নয়নকে শক্তিশালী করতে হলে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী হতে হবে। কোটা ব্যবস্থায় সরকারি চাকরি দিলে কিভাবে স্থানীয় উন্নয়ন সম্ভব? এলাকার লোক অফিসে আসলে তারা অতিরিক্ত অবৈধ সুবিধা দিয়ে এলাকার উন্নয়ন করবেন?

অনেককে বলতে শুনেছি এলাকার একজন লোকের সরকারী চাকরি হলে আশেপাশের সবার অবস্থা ভাল হয়ে যায়। কিন্তু এভাবে নিজের এলাকার লোককে অতিরিক্ত সুবিধা করে দেওয়াটা অনৈতিক। তাই আপাতত দৃষ্টিতে ঠিক মনে হলেও জেলা কোটায় কতটুকু স্থানীয় উন্নয়ন হয় সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে।

কোন কিছুতে শর্টকাট ভাল না। কোটা হল সুষম সমাজ গড়ে তোলার জন্য একটা শর্টকাট। সঠিক পথ হল, প্রত্যেক নাগরিককে নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগ করে দেওয়া। তারপর যার যে কাজ ভাল লাগবে, যে যেকাজে পারদর্শী তাকে সেই কাজে নিয়োগ দেওয়া। সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিলে দিনশেষে লাভটা সবার।

বাংলাদেশে চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, ৫৬% কোটা। এটা পুরোটাই অন্যায্য, অমানবিক এবং প্রত্যেকটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী।

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on FacebookTweet on TwitterPlus on Google+