একজন সচেতন নাগরিকের দিনলিপি থেকে

গত কয়েক দিন ধরে দেশে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা প্রচণ্ডভাবে ভাবিয়ে তুলছে। কিছু কিছু ঘটনায় আমি সরকার এবং সংস্লিস্ট কতৃপক্ষের উপর ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত।

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিতিশীলতা ও তার ফলশ্রুতিতে লিবিয়ায় সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। এতে অধিকাংশ প্রবাসীর মত বাংলাদেশিরাও বিপদে পড়ে। বেসরকারি হিসেব মতে সেখানে অবস্থানকারী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় নব্বই হাজার। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে তারা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে, দেশে ফিরে আসা তো স্বপ্নের মত। সবচেয়ে বেদনাদায়ক বিষয় হল সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের অসক্রিয়তা এবং নির্লীপ্ততা। আমাদের দেশের অর্থনীতি অনেকটাই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রবাসীদের অভিযোগ বিদেশে অবস্থানকালে তারা কখনই প্রত্যাশামত সরকারি সহযোগিতা পান না।


গতকাল একটি টিভি সংবাদে দেখলাম, লিবিয়া থেকে দু’শ বাংলাদেশী দেশে ফিরেছে। তারা প্রথমে তিউনিশিয়ায় অবস্থান নেয় পরে সেখান থেকে ঢাকায়। বিমান বন্দরে তারা কান্না ভরা কন্ঠে বললেন, বাংলাদেশ সরকার তাদের কোন খোজ খবর নেয় নি বরং তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোন লাভ হয় নি। তিউনিশিয়া বিমান বন্দর থেকে খাবার না দিলে না খেয়েই হয়ত তারা মারা যেত। মনটা একেবারে দমে গেল এই খবর দেখে। এরপরের খবরটি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। প্রধানমন্ত্রী গেছেন একটি সেমিনারে। সেমিনারের আলোচনার বিষয় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব। তিনি অশ্রুসজল হয়ে বেদনাভরা কণ্ঠে বলছিলেন, তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব তখন মোড়ায় বসে...।

আমার কথা হল দেশের প্রধানমন্ত্রী এত ফুরসত পান কই যে, এত গুরুত্বপুর্ণ কাজ রেখে অতীতের স্মৃতি রোমন্থনেই তার মনযোগ। এরকম চলতে থাকলে ভিশনঃ ২০২১ প্রহসন হয়েই থাকবে। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ কারও ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। সকলেই তা চেতনায় ধারণ করে। তাই প্রধানমন্ত্রী এ ধরণের সেমিনারে গিয়ে অতীত বেদনার গল্প বলায় ব্যস্ত না থেকে, প্রবাসীদের কান্নাভরা বর্তমানের উপাখ্যান শুনতেন তাহলে আমাদের আর হতাশ হতে হত না।

আর একটি বিষয় দেশের অন্যান্য নাগরিকের মত আমাকেও ভাবাচ্ছে। সরকার কেন জানি হঠাৎ করেই নোবেলজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের পিছনে উঠেপড়ে লেগেছে। তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর কথা শুনে মনে হল এই কাজ করে তিনি দেশের বিশাল একটি অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান করে ফেলেছেন। অথচ এডিপি’র সিংহভাগই যে বাস্তবায়ন হয় নি সেদিকে কারও নজর নেই। আর গ্রামীণ ব্যাংক এখন বাংলাদেশ নয় দেশের বাইরেও প্রসার লাভ করছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যখন অব্যবস্থাপনার পরিছয় দিচ্ছে, গ্রামীণ ব্যাংক তাদের সৃষ্টিশীল, গতিশীল ও সুদক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শুধু তাদের অবস্থানই শক্তিশালী করেনি বরং সাধারণ মানুষের উপকার করতেও সক্ষম হয়েছে।

ড. ইউনুসের মত মানুষ বার বার জন্মান না। এমন ক্ষণজন্মা মানুষের কর্মক্ষমতার সবোর্চ্চ ব্যবহারই কাম্য। তিনি যদি ভুল করে থাকেন (সরকারের ভাষ্যমতে তিনি পদে বহাল থাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেন নি), সেক্ষেত্রে আমাদের উচিৎ হবে কিভাবে তাকে বৈধভাবে স্বপদে বহাল করা যায় সেই চেষ্টা করা।

একদিকে যোগ্য ব্যক্তিকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে অন্যদিকে কিছু জায়গায় বসানো হয়েছে সবচেয়ে অযোগ্য লোকটিকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সমন্ধে একথাটি সমপুর্ণ খাটে। সভাপতি লোটাস কামাল প্রকৃতপক্ষে একজন ব্যবসায়ী। তিনি খেলাটি সমন্ধে কি জানেন তা তিনিই জানেন। আওয়ামী সরকারের গত মেয়াদে ক্রিকেট এগিয়ে নেয়ার অরগ্রদূত সাবের হোসেন চৌধুরী, যার কারণে আজ বাংলাদেশ বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পেরেছে, তিনি এই পদের জন্য যোগ্য লোক ছিলেন। তাকে বাদ দিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একজন পেশাদার ব্যবসায়ীকে।

এই লেখায় একজন গর্দভ সমন্ধে কিছু না লিখলে লেখাটি অসম্পুর্ণ থেকে যাবে। জেমি সিডন্স, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ, বাংলাদেশ ক্রিকেট ধ্বংসের কারণ, এই লোকটি কোচ হয়ে আসার পর আমরা পিছনের দিকে গেছি সামনে নয়। সে কোচ হওয়ার পর নতুন কোন খেলোয়ার তো তৈরি হয়ই নি বরং কিছু সহজাত মেধা ধ্বংস হয়েছে (আশরাফুল, শাহরিয়ার নাফিস,... হয়ত মাশরাফি)।

আমাদের ক্রিকেট দলে বর্তমানে দুজন খেলোয়াড় বিশ্ব্মানেরঃ সাকিব ও তামিম। সাকিব বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। কিন্তু ব্যাটিং বোলিংয়ের পর একজনের ঘাড়ে যদি অধিনায়কত্ব চাপানো হয়, তাহলে তার খেলা আগের মত থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। এখন তিনি উইকেটে কিভাবে বল আরও টার্ন করানো যায়, অন্যধরনের একটি শর্ট খেলা যায় সেই চিন্ত করবেন নাকি দল হারার পর সাংবাদিকদের বলার জন্য বক্তব্য তৈরি করবেন!

একজন খেলোয়াড় ভালো খেললেই তার উপর সব কিছু চাপিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে সাকিবই একমাত্র উদাহরণ নয়। তামিম আমাদের দলের সহ-অধিনায়ক (মুশফিকুর রহিমকে বাদ দিয়ে তাকে এই পদ দেয়া হয়েছে) একজন। বিশ্বের অন্য কোন দলে এভাবে অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ক নির্বাচন করা হয় না। যদি তাই হত তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়ক হতেন জ্যাক ক্যালিস আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল।

এখন প্রশ্ন হল সাকিব-তামিম ছাড়া কারা দলকে নেতৃত্ব দিবে। মুশফিকের যেহেতু পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে তাই সে সহ-অধিনায়ক হতে পারত। সমস্যা অধিনায়ক নিয়ে। পনের সদস্যের দলে মাশরাফিকে রেখে তাকে অধিনায়ক করা যেত। সে সুস্থ না হলে সাকিব হত ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। মাশরাফি অফিসিয়ালি বিশ্বকাপের আগের বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানে অংশ নিত। সাকিব ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হলে তার উপর চাপ অনেক কম থাকত।

আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল লজ্জাজনক পরাজয়ের স্বীকার হল। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আজ হতাশা-ব্যর্থতা-পরাজয়। এরপরও স্বপ্ন দেখি সামনে এগিয়ে যাওয়ার। কারণ জাতি হিসেবে আমাদের জন্মই যে হয়েছে সংকটকে জয় করতে।

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on FacebookTweet on TwitterPlus on Google+