২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে একজন বাংলাদেশীর মানসিক অবস্থা

গত তিনটি বছর বাংলাদেশের খবরা-খবর তেমন রাখিনা বললেই চলে। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর ইঁদুরের ব্রেইন সার্জারী, ব্রেইন রেকর্ডিং আর তাদের আচরণ পরীক্ষণের মাধ্যমে কিভাবে মস্তিষ্ক কোন নতুন জিনিস শেখে তার গবেষণা করার কাজেই মূলত মনোনিবেশ করেছিলাম। অনেক নতুন টেকনিক, প্রকৌশল এবং তত্ত্বীয় ব্যপার শিখতে হয়েছে নতুন করে।

সম-সাময়িক সময়ে আমার সব চিন্তা চেতনা মূলত ছিল বিজ্ঞান এবং গবেষণা ঘিরেই। তার উপর আমার ল্যাবের কিছু সমস্যা, ল্যাব প্রধানের ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যা এবং আমার কিছু মানসিক সংকট সব কিছু মিলিয়ে বেশ কঠিন সময়ের ভিতর দিয়েই যেতে হয়েছে। অবস্থা এখন অনেক ভাল। কিছু দারুণ আবিষ্কার হয়ে গেছে এর মধ্যে, যেগুলো লেখার কাজে এখন সময় পার করছি।

এসবের ভিতর গত নির্বাচনের সময় যখন দেশে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম, একদিন হঠাৎ জানতে পারি দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে। তাই ২০২৩ এর ডিসেম্বরে দেশে যাইনি। নির্বাচনের পর ২০২৪ এর জানুয়ারীতে দেশ থেকে ঘুরে আসি যদিও।

ডিসেম্বর থেকে সোস্যাল মিডিয়ায় দেশের খবর নিয়মিতই রাখা শুরু করি। ঐ সময় বেশিরভাগ খবরই থাকত দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে। তার সাথে থাকত এইসব প্রকল্পে দূর্নীতির খবর। বিভিন্ন নতুন স্থাপনা দেখে ভাল লাগত আবার দুর্নীতির খবর শুনলে খারাপ লাগত।

জুলাইমাসে একদিন হঠাৎ জানতে পারলাম দেশে কোটা বিরোধী আন্দোলন হচ্ছে। সাধারণভাবে নারী, জেলা, প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র জাতি সত্তা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষে হলেও আমি কখনই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা নাতি-নাতনিদের কোন কোটার পক্ষে নই। তাই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ছিল। হাইকোর্টের ফাইনাল রায়টি মোটামোটি মন্দের ভাল সমাধান। কিন্তু এর মধ্যে শক্ত হাতে আন্দোলন দমনের মাধ্যমে যে প্রাণহানি হয় তা জানতে পারি, একদিন বাড়িতে ফোন দিতে গিয়ে দেখি ফোন যাচ্ছে না। দেশে ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আমি ভাবলাম দেশে কি যুদ্ধ হচ্ছে নাকি। শান্তির সময়ে (অর্থাৎ অন্য কোন রাষ্ট্রের আক্রমণব্যতীত) দেশের ইন্টারনেট বা তথ্য প্রবাহে বাধা কোন ভাবেই কাম্য নয়। এটা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বা পাবলিক ফোরামে যা খুশি তাই বলার স্বাধীনতার থেকে অনেক বেশি মৌলিক।

তারমানে এই কিন্তু নয় যে, রাষ্ট্র কোন অবস্থাতেই কারও মত প্রকাশের বাধা সৃষ্টি করতে পারে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক সময় গোপনীয়তার প্রয়োজন। তবে সাধারণ জনজীবনের ব্যপার, নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক আলোচনায় রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ যত কম থাকবে ততই ভাল।

কিন্তু জুলাইয়ের আন্দোলনে সরকারি পক্ষের কঠোর দমনে বহু ছাত্র ও সাধারণ জনগণের প্রাণহানি হয়। যা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তার উপর পুলিশ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পাণহানি তো আছেই। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বল-প্রয়োগের অধিকার আছে। এখন প্রশ্ন হল যতটুকু প্রয়জন তার থেকে কত বেশি বল প্রয়োগ করা হয়েছে? বিচার-বিভাগীয় ও  আন্তর্জাতিক তদন্তে সেটা অবশ্যই বেরিয়ে আসবে। বিবিসির রিপোর্টে পুলিশের গাড়ি থেকে একজনের মৃতদেহ সরানোর দৃশ্য ছিল খুবই বিভৎস। এসব খবর যে আমাকে কত মানসিক পীড়া দিয়েছে তা বলার মত নয়। একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে আমি শুধু বিদেশ থেকে শান্তির জন্য আশা করছিলাম।

ব্যক্তিগতভাবে আমি অধিকারের লড়াইয়ের পক্ষে। অর্থাৎ অধিকারের জন্য জনগণের আন্দোলন ভাল কিছু বয়ে আনে। তবে আমি বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের ব্যপারে তেমন উৎসাহী নই যদিনা কোন রাজনৈতিক দল এর নেত্রীত্বে থাকে)। কারণ রাজনৈতিক নেতৃত্ব না থাকলে সরকার পতনে এক ধরণের ক্ষমতার শূণ্যতা তৈরি হয়। এতে অরাজকতা তৈরি হয়। তাই আমি বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির নেত্রীত্বে সরকার পতনের আন্দোলন কে বেশি সমর্থণ করি।

কিন্তু বাংলাদেশের গুরুতর সংকটের বাস্তবতায় যা হয়েছে তাই এখন বর্তমানের বাস্তবতা। এখন যে নতুন ভাবে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে সেটা বেশ ইন্টারেস্টিং। ছাত্রদের দাবি-দাওয়ার মাধ্যমের নিরপেক্ষ সরকার দেশ চালাচ্ছে, ইতিহাসে এমন নজির যেহেতু নেই তাই বর্তমান অবস্থার নতুনত্ব অনেক। যেকোন নতুন একই সাথে দুটি বিষয় নিয়ে আসে ঝুঁকি এবং সুযোগ। বাংলাদেশে কোনটা হবে বলার সময় এখনও আসেনি। তাই আমার মনে একই সাথে আশংকা ও আশা দুটিই আছে।

বলতেই হবে মানসিকভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে চিন্তা করা গত ডিসেম্বর মাস থেকে অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। বিদেশে থেকে এতটুকুই চাই - দেশের মানুষ ভাল থাকুক, শান্তিতে থাকুক, মাথা উঁচু করে থাকুক।

মানুষ কি আসলেই বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন একটা প্রাণী?

যখন আমরা একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তখন বিচারবুদ্ধির ভূমিকা কতটুকু আর আবেগের ভূমিকা কতটুকু?
প্রতিদিনই আমরা সাধারণত অনেকগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকি। এই যেমন ঘুম থেকে ওঠার পর ঠিক কোন কাজ করব। সকালে কি খাব। অফিসে যাব কি যাব না। অফিসের পর কি করব। কাউকে ফোন দিব কি দিবোনা।
 ছবিতেঃ ধূসর ভাজযুক্ত অংশই মস্তিস্কের নিওকর্টেক্স, বর্ণযুক্ত অংশ লিম্বিক সিস্টেম।

শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেল ২০২০

গত কয়েকবছর ধরে ফেসবুক এবং আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে কিছুটা লেখালিখি করছি। প্রত্যেক বছরের প্রথম দিনেই আমি সাধারণত গত বছরের ঘটনাবলী নিয়ে একটা পোস্ট লিখি। এবারও তা করতে চেয়েছি। কিন্তু পিছন ফিরে তাকালে স্মরণীয় ঘটনার চেয়ে সংকটের বাহুল্যই বেশি চোখে পড়ে।

সংকটের কোন অভাব ছিল না ২০২০ সালে। একদিকে করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী অন্যদিকে আমার পিএইচডির ফান্ডিং শেষ হওয়া দুই মিলিয়ে বেশ কাঠখোড় পোড়াতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও বছরটা ভালয় ভালয় শেষ করতে পেরেছি এইটাই স্বস্তির বিষয়।


অন্ধকারের আলো

"তোমার সবদিকে যখন অন্ধকার,
তখন চারপাশটা আর একবার একটু ভাল করে দেখ।
কারণ এমনো হতে পারে - অন্ধকারের মাঝে তুমিই আলো।"
--- জালাল উদ্দিন রুমী

আল-আন্দালুস

মধ্যযুগে সমগ্র ইউরোপ যখন অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত তখন স্পেনের মুসলিমরা গড়ে তুলেছিল জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ এক সাম্রাজ্যের। দক্ষিণ স্পেনের বিস্তৃত অঞ্চল ছিল এই সাম্রাজ্যের অধীনে। আরবেরা এই অঞ্চলের নামকরণ করেছিল আল-আন্দালুস। বর্তমান সময়ে এই অঞ্চলকে সবাই চেনে স্পেনের রাজ্য আন্দালুসিয়া হিসেবে।

যেমন ছিল আমার ২০১৯ঃ গবেষণা এবং জীবন

তিনটি শব্দে বছরটির সারসংক্ষেপ করতে গেলে যা দাঁড়ায় তা হলোঃ পুরোই দৌড়ের উপর।
গত জানুয়ারীতে আমস্টারডাম শহরের জমকালো আলোকসজ্জায় যখন নতুন বছরের উৎযাপন করছিলাম তখন বোঝার কোন উপায় ছিলনা কি অপেক্ষা করছে এ বছরে।

আমস্টারডাম - ব্রাসেলস ট্যুর শেষ করে অক্সফোর্ডে প্রথম দিন ল্যাবে গিয়ে পুরাতন ইমেইল ঘাটতে গিয়ে বুঝলাম একটা বিশেষ ইমেইল প্রথমবার পড়ার সময় বিশাল ভুল করে ফেলেছি। সেই ইমেইলটি ছিল একটা সম্মেলনের বিষয়ে।


ক্রিসমাসের ছুটি ২০১৯

গত ক্রিসমাসগুলোতে ছুটির সময় নিয়মিত দেশে যাওয়া হলেও, এবার যাচ্ছি না। গবেষণার চাপ সামলাতে গিয়ে এত বেশি কাজ জমা পরে গেছে যে এই সময় ছুটি কাটানোটা খুব একটা যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি আমার কাছে।


নিউ ইয়র্ক

নিউ ইয়র্ক ঘোরাঘুরি শেষ করে বাল্টিমোরে যাচ্ছি।

আজকের আবহাওয়া বেশ রৌদ্রজ্জল আর ঝলমলে। গত দুইদিন এমন মেঘলা আবহাওয়া ছিল যে আকাশচুম্বী বিল্ডিংগুলোর মাথা দেখা যাচ্ছিল না।

নিউ ইয়র্কে ছিলাম এক বন্ধুর বাসায়। ও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পোস্টডক। ইউনিভার্সিটির হাউজিং এর একটা ফ্ল্যাটে থাকে। ঘোরাঘুরি যা করেছি সব ম্যানহাটন এলাকায়।


গন্তব্য বাল্টিমোর

জানুয়ারি মাসটা ব্যস্ততার মধ্যে কখন কেটে গেল টেরই পেলাম না। আমস্টারডাম-ব্রাসেলস ট্যুরের পর তাই অক্সফোর্ড এর বাইরে কোথাও যাওয়া হয়নি।

আজকে প্রথম অক্সফোর্ডের বাইরে বের হলাম। বাসে উঠলাম একমাস পর। যাচ্ছি হিথ্রো এয়ারপোর্টের দিকে।


বই পড়া

আমার স্কুল জীবন পার করেছি কুড়িগ্রামে। ছোট শহর হওয়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে বিষয়ে পড়ার ব্যবস্থা সেখানে খুবই কম ছিল। ইন্টারনেট তখনও সেভাবে আসেনি। আর বোর্ড বইয়ের বাইরের কোন বই কুড়িগ্রামে পাওয়া কঠিন ছিল। তারপরও স্কুলের পড়াশুনা চুকিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের একটা সাবজেক্ট পড়ে এখন বিশ্ববিখ্যাত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউরোসায়েন্সে পিএইচডি করছি; এর অনেকটা কৃতিত্ব আমার জীবনে পড়া বইগুলোর।