কর্টেক্স ক্লাব

অক্সফোর্ডে যাওয়ার পর থেকেই আমার জীবনের একটা উল্লেখ্যযোগ্য সময় জুড়ে আছে কর্টেক্স ক্লাব। মূলত গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টদের নিয়ে করা এই ক্লাবে সাধারণত যুক্তরাজ্যের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক খ্যাতিমান বিজ্ঞানী আসে বক্তব্য দিতে। তারা তাদের একদম লেটেস্ট কাজ নিয়ে কথা বলে।


কর্টেক্স ক্লাবের ব্যাপারে অনেকে একটা ভুল বোঝে। সেটা হল, এই ক্লাবের কাজকারবার সবই বুঝি কর্টক্স নিয়ে। মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশ নিয়ে বোধ হয় এরা টক আয়োজন করে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই ক্লাব মস্তিষ্কের ব্যপারে যেকোন গবেষণা করা বিজ্ঞানীকে আমত্রণ করে। তা কর্টেক্স নিয়েই হোক আর কর্টেক্স এর বাইরের কোন অংশ নিয়ে। কর্টেক্স হল মস্তিষ্কের সবচেয়ে উপরিভাগের অংশ। এখানেই মুলত বুদ্ধিবৃত্তিক কাজগুলো হয়। মানুষের কর্টেক্স অন্য যেকোন প্রানীর কর্টেক্স এর থেকে অনেক বড় তাই মানুষের বুদ্ধি এত বেশি।

অন্য যেকোন বিজ্ঞান বক্তৃতার সাথে কর্টেক্স ক্লাবের টকগুলোর কিছুটা পার্থক্য আছে। গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টদের জন্য করা বলে এগুলো সাধারণত ক্লাস লেকচারের চেয়ে একটু বেশি টেকনিক্যাল হয়। কিন্তু সেটা কনফারেন্স টকের মত স্পেসিপিক বিষয় নিয়ে হয়না। বরং একটা জেনারেল ডিসকাসন টাইপ হয়।

প্রথমে বক্তা ৪৫ মিনিটের একটা টক দেন। তারপর বাকি ৪৫ মিনিট প্রশ্ন উত্তর পর্ব। এরপর বক্তাকে সাথে নিয়ে একটা পাবে যাওয়া হয়। যেখানে ডিনার ও পানীয় উপভোগের সাথে সাথে ডিসকাসন চলতে থাকে।

আমাদের ডিপার্টমেন্টের শেরিংটন লাইব্রেরী অথবা লে গ্রো ক্লার্ক বিল্ডিং কর্টেক্স ক্লাবের অনুষ্ঠানগুলোর জন্য ব্যবহার করি।

কিছুদিন আগে ক্লাবের সদস্যদের সামনে বক্তব্য দিতে এসেছিলেন কার্ল ফ্রিস্টন। নামকরা ব্যক্তি হওয়ায় তার টকে অনেক লোক সমাগম হয়েছিল। ওনার কথা বলার একটা নির্দিষ্ট কারণ আছে। একটা এআই এলগোরিদম কিছুদিন আগে তাকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান নিউরোসায়েন্টিস্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছে। কেন করেছে তা জানিনা। তবে লোকটা আসলেই বুদ্ধিমান। তিনি মারকভ ব্লাংকেট কনসেপ্ট ব্যবহার করে মস্তিষ্কের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।

ফ্রিস্টনের কাজের মূলে আছে মস্তিষ্কের কাছে সব কনসেপ্টই অনুমান হলেও একটা জিনিস পরম সত্য। আর তা হল If I exist (am) then I must have beliefs (think) অর্থাৎ আমার অস্তিত্ব থাকলে আমার মধ্যে বিশ্বাসও থাকবে। মানে, আমি যদি জগত থেকে আলাদা কোন এনটিটি হই তাহলে আমার মধ্যে কিছু একটা থাকবে যা পারিপার্শ্বিক থেকে আলাদা। সেটাই হল আমার বিশ্বাস। এই প্রাইয়র এর উপর ভিত্তি করেই আমি জগততে বুঝি।

এজন্য আমরা ফ্রিস্টনের টকটির শিরোনাম দিয়েছিলাম, I am therefore I think.

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on FacebookTweet on TwitterPlus on Google+