বিসিএস অভিজ্ঞতাঃ প্রিলি পরীক্ষা

এর আগে দু'বার ৩৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। এবার প্রিলির অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। উল্লেখ্য একটাই বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছি। তাই বিসিএস বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা অর্বাচীন লেভেলের।

প্রিলির অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে একটা সমস্যা হচ্ছে। তা হল ৩৫তম এর প্রলিমিনারী পরীক্ষা অনেক আগে হওয়ায় সেই সময়ের ঘটনা তেমন একটা মনে নেই।


মোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষা ছিল। যতদূর মনে পরে ইংরেজী, গণিত, মানসিক দক্ষতা ও বিজ্ঞানে প্রায় সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর করেছিলাম (কঠিন প্রশ্নগুলো ছাড়া)। মানসিক দক্ষতার জটিল প্রশ্ন কয়েকটা বাদ দিয়ে দিয়েছি। কারণ সেগুলো সলভ করতে অনেক সময় লাগছিল। আর কিছু প্রশ্ন ছিল, যে কোন সিচুয়েশনে কি করতে হবে টাইপ। সেগুলোর মধ্যে যেগুলোর ক্ষেত্রে আমার কনফিউশান ছিল সেগুলো উত্তর করিনি।
বাংলায় কিছু পেরেছি কিছু পারিনি। আর সাধারণ জ্ঞান বেশিরভাগই মনে হয়েছে একদম অজানা। তাই সেগুলো উত্তর করার চেষ্টাও করিনি। তবে যেগুলো নিশ্চিত ছিলাম সেগুলোর উত্তর দিয়েছি।

মোট কথা আমার যে প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা ছিল সেগুলোরই উত্তর করেছি।

আমি মনে করি লিক্ষিত পরীক্ষার জন্য যেধরণের তথ্য জানা প্রয়োজন প্রিলির জন্য সে তথ্যগুলো জানাই যথেষ্ট। শুধুমাত্র প্রশ্নের ধরণ আলাদা। চারটি উত্তরের একটি সিলেক্ট করতে হয়। এর যেমন সুবিধা আছে তেমনি অসুবিধাও আছে। অনেকে লোভের বশে অনুমানভিত্তিক উত্তর করেন কিন্তু এতে লাভ হয়না। কারণ প্রত্যেক ভুল উত্তরের জন্য ০.৫ মার্ক কাটা যায়। তাই ভালভাবে না জেনে উত্তর না করাই ভাল। তবে যদি এমন মনে হয় যে দশটা এমন প্রশ্ন আছে যেগুলো উত্তর করলে কমপক্ষে ৮টা সঠিক হবে সেক্ষেত্রে চান্স নিতে পারেন। এই সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে যে কতটুকু রিস্ক নিবেন।

আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে আর একটা ব্যপার খেয়াল করেছি সেটা হল এমসিকিউ ধরণের যেকোন পরীক্ষায় ভাল করার একটা উপায় হল নিজের স্ট্রেংথ ও উইকনেস জানা। স্ট্রেংথ এর জায়গায় আরও বেশি এফর্ট দেওয়া উচিৎ যাতে সেখানে কোন দূর্বলতা না থাকে। পরীক্ষার সময়ও বেশিরভাগ সময় স্ট্রেংথ এর জায়গায়ই ব্যয় করা উচিৎ। যেমন - মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় বায়োলজি, ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রি মিলিয়ে ৭০ নম্বর থাকে। আর মাত্র ৩০ নম্বর হল বাংলা সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি। কিন্তু আমার বন্ধুদের দেখতাম তারা সাধারণ জ্ঞানের পিছনে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করছে। কারণ কি? কারণ হল সাধারণ জ্ঞান তারা পারে না। আমি তাদের যতই বোঝাই আরে এই সেকশনে এত কম প্রশ্ন থাকে যে, একজন যদি সাধারণ জ্ঞানের কোন প্রশ্নের উত্তরও না দেয় তাও সে চান্স পাবে। কিন্তু ফ্রি পরামর্শ কে শোনে? ফলাফল যা হবার তাই হল। মেডিকেল কোচিং না করেও আমি ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেয়ে গেলাম কিন্তু বন্ধুদের অনেকের কোন মেডিকেলেই হল না। তবে হ্যাঁ, সবকিছুতে ভাগ্যেরও একটা অবদান থাকে।

তো আমি বলতে চাচ্ছি পরীক্ষার আগেই নিজের শক্তিশালী ও দূর্বল জায়গা চিহ্নিত করে ফেলেন। আর হিসাব করেন আপনার শক্তিশালী জায়গাই আপনাকে পাশ করানোর জন্য যথেষ্ট কিনা। যেমন- আপনি যদি শুধু বিজ্ঞানে ভাল হন আর অন্য সব সেকশনে দূর্বল হন, তাহলে তো আর হবে না। সেক্ষেত্রে আরও একটা দুইটা সেকশনে নিজেকে উন্নত করতে হবে। তাই পরীক্ষার আগেই প্লান করুন কোন কোন সেকশনে আপনার পক্ষে ভাল করা সম্ভব। আর পাশ করার জন্য ঐ কয়টা সেকশনই যথেষ্ট কিনা।

তবে পরীক্ষার আগে শুধু প্লান করলেই হবে না। পরীক্ষার সময় সেটা ইমপ্লিমেন্টও করতে হবে। তার জন্য আমি যেটা করিঃ পরীক্ষার শুরুতেই পুরো প্রশ্ন চোখ বুলিয়ে নেই। বোঝার চেষ্টা করি আসলেই কোন কোন সেকশন আমার জন্য সহজ। তারপর সেভাবে একটা প্লান করে একটার পর একটা সেকশন উত্তর করি। কারণ, এমন হতে পারে, আপনি গণিতে অনেক ভাল কিন্তু প্রশ্নে গণিত সেকশনটাই সবচেয়ে কঠিন হল। অথচ সাধারণ জ্ঞানে দূর্বল হওয়া সত্ত্বেও আপনার মনে হচ্ছে বেশিরভাগ প্রশ্নই জানা, সেক্ষেত্রে গণিতের নম্বর সাধারণ জ্ঞান দিয়ে উঠিয়ে ফেলার চেষ্টা করা উচিৎ।

মোট কথা এমসিকিউ টাইপের পরীক্ষায় ভালো করতে প্রস্তুতির পাশাপাশি দরকার সঠিক পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা করতে হবে পরীক্ষার আগে এবং পরীক্ষার সময়। আর সেই পরিকল্পনাকে পারফর্মেন্সে রুপ দিতে হবে। তাহলেই কাজ হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

যাই হোক, কথা হচ্ছে, আপনার দায়িত্ব নিজের ১০০%টাই দেওয়া, ফলাফল কি হবে সেটা পরের বিষয়।

মঞ্জিলুর রহমান
কিবল কলেজ, অক্সফোর্ড

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on FacebookTweet on TwitterPlus on Google+