ক্যারিয়ার বিষয়ে কিছু কথাঃ প্লানিং ও দীর্ঘপ্রস্তুতি

একটা কথা আছে, Overnight success usually takes a decade of uphill work। অর্থাৎ, "রাতারাতি সাফল্যের জন্য দরকার যুগের পর যুগের অক্লান্ত পরিশ্রম"। কথাটা এইজন্য বললাম যে, অনেক সময় দেখা যায়, কেউ দিনের পর দিন ধরে একটা কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছে তাতেও কাজ হচ্ছে না আর কেউ শুধু কয়েকদিনের প্রস্তুতিতেই অনেক কিছু করে ফেলছে। এমন কিছু দেখলে আমরা সাধারণভাবেই ধারণা করি ঐ ব্যক্তি নিশ্চয় সাফল্যের কোন শর্টকাট মেথড পেয়ে গেছে।


কিন্তু এর আসল অবস্থা একেবারেই ভিন্ন। এর কারণ হল অনেক সময় ব্যক্তি কিছু করে সেটা দৃশ্যমান থাকেনা। কিন্তু পরে তার অদৃশ্য কাজগুলোই কাজে আসে। তাই যারা নিয়মিত নিজেকে উন্নত করছে প্রতিযোগিতার জন্য একটু একটু করে তৈরি করছে তারা তাতক্ষণিক প্রস্তুতি ছাড়াও অনেক কিছু করতে পারে। তবে এটা ভাবার কোন কারণ নেই তাদের কোন প্রস্তুতি ছিল না। তারা আসলে সারা জীবন ধরেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। জীবনের জন্য প্রস্তুতি।

সবশেষে আপনি যদি নিজেকে প্রতিদিন একটু একটু করে উন্নত করতে থাকেন তাহলে একসময় আপনি এমন অবস্থায় চলে যাবেন যে নিজের কাছেই নিজেকে অপরিচিত মনে হবে। তখন আপনার আর চাকরীর খোঁজ করে বেরাতে হবে চাকরীই আপনাকে খুঁজে নিবে। ব্যাপারটা হচ্ছে আপনি নিজের লাইফস্টাইলটাই পরিবর্তন করে এমন করে ফেলবেন যাতে তার মাধ্যমে নিজের শুধু উন্নয়ন হয়। এই যেমন ধরেন- একজন ব্যক্তি স্বাস্থ্য ভাল করতে চাচ্ছে। এটার একটা উপায় হতে পারে সে একটা রুটিন করে বিরক্তির সাথে জিমে যাবে। আর একটা উপায় হতে পারে যে জিমে যাওয়াকে নিজের জীবনের একটা অংশ বানিয়ে ফেলবে। অর্থাৎ অবসর সময় পেলেই জিমে গিয়ে বসে থাকে। একটু একটু করে ব্যায়াম করে। এভাবে কিছুদিন গেলে একসময় জিমে যাওয়াকে তার কাছে আর অস্বাভাবিক মনে হবে না। এভাবে পড়াশুনাকেও আপনি নিজের জীবনের অংশ করে ফেলতে পারেন। খবরের কাগজ যখন পড়ছেন তখন কিছুদিন সচেতন ভাবে উল্লেখযোগ্য খবরগুলো পড়া শুরু করেন। একসময় দেখবেন মনোযোগ না দিয়ে পড়লেও সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনার মাথায় ঢুকে যাচ্ছে।

তবে কোন কিছু লাইফস্টাইলে পরিণত করতে চাইলে তার পিছনে সময় দিতে হবে। শর্টকাট খুঁজলে হবে না। দীর্ঘদিন ধরে একটু একটু করে অভ্যাস করতে হবে। একসময় সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে।

যে জিনিস যত সহজে মাথায় ঢোকে তা তত সহজেই মাথা থেকে বের হয়ে যায়। তাই লং টার্ম কাজ করাই ভাল।

জীবনে আর একটা জিনিস গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল পরিকল্পনা। সবচেয়ে ভাল হয় একাধিক পরিকল্পনা থাকলে। অর্থাৎ, একটি পরিকল্পনা সফল না হলে অন্য কি করবেন সেটা আগে থেকেই ভেবে রাখবেন। শুধু মাত্র প্লান এ-বি না ইংরেজী ভাষায় যেহেতু ২৬টি অক্ষর আছে তাই এক্ষেত্রে ২৬টা প্লানই করতে পারেন। একটা কাজ না করলে পরেরটা।

আমি মাস্টার্স করতে গত বছর যখন অক্সফোর্ডে আসলাম তখন এখানকার বন্ধুরা প্রায়ই প্রশ্ন করত তোমার সামনের বছরের প্লান কি। আমি বলতা বেশ কয়েকটা প্লান আছে। প্লান এ থেকে ই পর্যন্ত। দেশ থেকে আসার সময় বিসিএস দিয়ে এসেছিলাম। তিনটি জায়গায় পিএইডির জন্য এপ্লাই করেছিলাম। একটি জায়গায় গবেষণা সহকারী হিসেবে যেন চাকরী পাই তা ঠিক করে রেখেছিলাম। অর্থাৎ যেকোন একটা কাজ করলেই হল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বিসিএস সুপারিশকৃত হয়েছি। অক্সফোর্ডের দুইটি ডিপার্টমেন্টে পিএইচডি এর জন্য স্কলারশিপ পেয়েছি। সেজন্য আর গবেষণা সহকারীর চাকরীর জন্য এপ্লাই করিনি।

বেশিরভাগ লোক যাদেরকে দেখছেন সফল ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখবেন তারা অনেক কিছুতে ব্যর্থও হয়েছে। কিন্তু কোন একটা পরিকল্পনায় সফল হয়েছে আর আপনি সেটার কথাই জানেন আর ভাবেন এই লোক অনেক সফল। আমি মনেকরি বিশটা পরিকল্পনা থাকলে তার একটা সফল হয়। তাই পরিকল্পনা করে চেষ্টা করলে ক্ষতির চেয়ে লাভই বেশি হয়। আর অক্সফোর্ডে আমরা বন্ধুরা একে অপরকে নিয়মিত একটা কথা বলি, Trying is not gonna hurt. If you fail, no one is going to know. People only know when you succeed.

ভবিষ্যতে একটা লিখা লেখার ইচ্ছা আছে। এই লেখাটা সেটার একটা প্রাইমার। আমি যেহেতু নিউরোসায়েন্সের ছাত্র তাই আমি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করব কেন কারও স্মৃতি দ্রুত আর কারও ধীরে তৈরি হয়, কাউকে কেন আমরা বেশি মেধাবী আর কাউকে কম মেধাবী বলি এবং কিভাবে আমরা নিজেদের মেধার উন্নয়ন করতে পারি। দ্বন্দের আছি সবার জন্য লেখাটা লিখব নাকি ইংরেজীতে একটু অপিনিয়ন স্টাইলে কোন জার্নালের জন্য লিখব।

সবাই সবার লক্ষ্যে পৌছাক।

মঞ্জিলুর রহমান
কিবল কলেজ, অক্সফোর্ড

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on FacebookTweet on TwitterPlus on Google+