বায়োমেট্রিক হতাশা

আজকের দিনটির গুরুত্ব বাংলাদেরশের ইতিহাসে অনেক বেশি। কারণ এইদিনের পর থেকে  বাংলাদেশের সকল সিম বায়োমেট্রিকভাবে নিবন্ধিত হতে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়ত  বাংলাদেশের ইতিহাসকে দুইটি অধ্যায়ে ভাগ করা হবেঃ একটা হল ৩০ এপ্রিলের আগে  আর একটা ৩০ এপ্রিলের পরে। বাংলাদেশী মাত্রই তাই এইদিনটিতে বিশেষ উত্তেজনা  অনুভব করছে। রুহানও ব্যতিক্রম নয়। তার আজকের দিনের সমস্ত কর্মকান্ডই  বায়োমেট্রিক সিম রেজিস্ট্রেশনকে কেন্দ্র করে।


ঢাকা, বাংলাদেশ।
 ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল সকাল ৭ঃ৩০।


ঘড়ির যান্ত্রিক এলার্মের কর্কশ আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল রুহানের। এত সকালে ঘুম থেকে ওঠে না সে। অনেক রাত করে ঘুমানোর অভ্যাস হয়ে গেছে। চাইলেও সকালে ওঠা সম্ভব হয় না। গতরাতে ফজরের আযানের ঠিক আগে ঘুমিয়েছে। তারপরও সকালে উঠতে হল। সেকারণে  মেজাজটা বেশ যারপরনাই খারাপ ওর।

ঢাকা শহরের অদূরে কামরাঙ্গীর চর ঘেসে একটা জায়গায় সে বসবাস করে। বাইরের জগতের  সাথে খুব একটা যোগাযোগ নেই। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে মানুষের সাথে মেশা  তার পছন্দ নয় বলেই সে নিজেকে আলাদা করে রাখে। কিন্তু আসল ব্যপারটা তা না।  প্রকৃত অবস্থা বুঝতে গেলে অন্তত দুইটি ঘটনা জানতে হবে যা সাম্প্রতিক সময়ে  ঘটে গিয়েছে।

প্রথম ঘটনাঃ
গত শনিবার ঢাকার গুলশান -১ চত্বরের কাছে এটি ঘটে। ফুটপাতের পাশ দিয়ে হেঁটে  যাচ্ছিল এক তরুণী। লাল জামা পরিহিত, হাতে লাল একটা ব্যাগ। ফোনে কথা বলতে  বলতে এগুচ্ছে। একদমই আনমনা। আশেপাশে কি হচ্ছে খেয়াল নেই। হঠাৎ একটা হ্যাচকা  টান অনুভব করে সে। তারপরেই বুঝতে পারে ব্যাগটি আর তার হাতে নেই। একটি  মোটরসাইকেলে করে দুজন লোক তার পাশে এসে স্পিড কমিয়ে দিয়ে ব্যাগটি টান দিয়ে  চলে গেছে। পিছনের সিটে বসা লোকটির হাতে তখনও লাল রঙের চকচকে বস্তুটি দেখা  যাচ্ছিল। বুঝে উঠতে একটু সময় লাগে তরুণীর যে সে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছে।

রাগে-দুঃখে তরুণী ততক্ষণে আত্মহারা। নিজের অজান্তেই মোটরসাইকেলের পিছনে  ছুটতে শুরু করে। রাস্তায় জ্যাম থাকায় ছিনতাইকারীরা তখনও দৃষ্টি সীমার  মধ্যেই ছিল। দৌড় থামায়নি সে। যদিও তার গাল বেয়ে নেমে যাচ্ছিল অশ্রুর ধারা।  রাগের চোটে বের হওয়া চোখের জল নাকি গরম হয়। কে জানে! চোখের জলের তাপমাত্রার গবেষণা করা এখানে অমূলক। কারণ একটি মেয়ের ব্যাগ ছিনতাই হয়েছে এবং সে  ছিনতাইকারীর পিছনে দৌড়াচ্ছে। মহাখালী মোড় পর্যন্ত দৌড়ে এসে আশা ছেড়ে দিল  সে। সামনে আর জ্যাম নেই। ফাঁকা রাস্তায় মোটরসাইকেলের গতি বেড়ে গেছে।

ঠিক এসময়ই তরুণীর কানের কাছ দিয়ে সাঁই করে কিছু একটা চলে গেল সামনের দিকে।  জিনিসটা দৌড়ে গিয়েছিল না উড়ে গিয়েছিলে তা সে আর মনে করতে পারেনি। তবে  খানিকবাদেই মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচ থেকে কিছু একটা ভাঙ্গার কড়মড় শব্দ  শোনা গেল। শব্দটা এতই আলাদা ছিল যে দুঃখের সময়ও তরুণী কৌতুহল আটকে রাখতে পারল  না। এগিয়ে গেল কি হয়েছে দেখতে। কাছে গিয়ে যা দেখল তা সে আশা করেনি মোটেই।  মোটরসাইকেলটি গুড়া গুড়া হয়ে পড়ে আছে। দুইটা ছেলে চিৎ করে শুয়ে কাতরাচ্ছে।  আর লাল রঙের টাইট প্যান্ট ও টাইট জামা পড়া একজন লোক তার লাল ব্যাগটি হাতে  নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক যেন তার জন্যেই অপেক্ষা করছিল। সে কাছে যেতেই তাকে  ব্যাগটি ফিরিয়ে দিয়ে বলল, "এই নেন আপনার জিনিস"।

এই কথা বলে সুঠাম দেহের পুরুষটি মুখ ঘুরিয়ে পা দিয়ে মাটিতে একটি আঘাত করল  যেন সেই মুহুর্তেই উড়ে যাবে। তরুণীর বোধদয় হয় যে, পরিচয় পর্বটিই সারা হয়নি  যুবকের সাথে। নাম্বার ফেসবুক আইডি বিনিময় তো না ই। সে বলে উঠল, "দাঁড়ান। আপনার  নামটি জানা হল না"। লোকটি মুখ ফিরে শুধু একটি বাক্য বলেই উড়ে চলে গেল সাঁ  সাঁ শব্দ করে, "আমি মাল, তমাল"।

আশেপাশে জড়ো হওয়া লোকজন হাততালি দিতে থাকল। তাদের মধ্যে থেকে একজন চেঁচিয়ে বলল, "ঢাকার শহরে  সুপারহিরো!" আর একজন নতুন হিরোর নামও ঠিক করে ফেলল, "সুপারমাল।" বাকিরা তাতে সমর্থন দিয়ে চিৎকার কতে থাকল, “সুপারমাল!, সুপারমাল!”।

সেই ঘটনার পর থেকে রুহানের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। সে বোঝে তার ক্ষমতা অন্যদের  থেকে বেশি বলেই দায়িত্বটাও  অন্যদের থেকে অনেক বেশি। কথায় আছে, "উইথ গ্রেট  পাওয়ার কামস গ্রেট রেসপনসিবিলিট।" সুপারহিরো আইনের মূলনীতিই হল এটা। অনেক  সুপারহিরো এইটা মানতে চায়না। তারা তাদের ক্ষমতাকে মানুষের উপকারে ব্যবহার  না করে, মানুষের ক্ষতিসাধনে ব্যবহার করে। তখন তাদেরকে সুপারহিরো সম্প্রদায়  থেকে বের করে দেওয়া হয়। তারা হয়ে যায় সুপারভিলেন। রুহান কখনই সুপারভিলেন  হতে চায় না। সে সারাজীবন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের প্রিয় সুপারমাল হয়েই  থাকতে চায়।

দ্বিতীয় ঘটনাঃ
আর একটি ঘটনা না বললেই নয়। বসুন্ধরা সিটি নামে ঢাকায় একটা বড় শপিং সেন্টার  আছে। কিছুদিন আগে সেখানে কেনাকাটা করতে গিয়েছিল রুহান। গ্যাজেট এন্ড গিয়ার  নামক দোকানে সে বিশেষ একটি যন্ত্র অর্ডার করেছিল চায়না থেকে। সেই গ্যাজেট  দিয়ে ঢাকার কোথায় কখন কি অপকর্ম হচ্ছে সেটা জানা যায়। গ্যাজেট এন্ড গিয়ার  হল সুপারহিরোদের ইন্ট্যারন্যাশনাল সাপ্লাইয়ের বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ যদিও তারা  এখানে আন্ডারকাভারে থাকে। লোকজন দোকানটিকে একটি সাধারণ মোবাইলের দোকান  হিসেবেই চেনে।

কেনাকাটা শেষে ফেরার পথে নিচতলার একটি আইসক্রিম পার্লার থেকে একটা আইসক্রিম  কিনে নিল রুহান ওরফে তমাল ওরমে সুপারমাল। ঢাকায় অনেক গরম, তাই ঠান্ডা খাওয়ার সাথে সাথেই অনেক শান্তি লাগল ওর। খেতে খেতেই দুলকি চালে হেঁটে বের হওয়ার দরজার দিকে এগুতে থাকল। ঠিক এসময় একটা ঘটনা ওর চোখে পরল।  চারপাঁচজন ছেলে মিলে একটি  মেয়ের পিছু নিয়েছে। একটু পরেই তারা মেয়েটিকে উত্তক্ত্য করা শুরু করল।  হঠাৎ একটি ছেলে হুট করে মেয়েটিকে চড় দিয়ে ফেলল। মেয়েটিও যথেষ্ট শক্ত।  সাথে সাথেই বদমায়েশ ছেলেটির দুই পায়ের সংযোগ স্থল বরাবর কষে একটা কিক মারল।  ছেলেটি আহত হয়ে পড়ে গেল। কিকটি জায়গামতই লেগেছে। কিন্তু বাকি ছেলেগুলো  ততক্ষণে মেয়েটিকে ধরে ফেলল। অনেক চেষ্টার পড়েও সে নিজেকে তাদের কবল থেকে  ছাড়াতে পারল না। এইসময় কিক খাওয়া ছেলেটি মেঝে থেকে উঠে আসল। একদম উদ্ভ্রান্ত দেখাচ্ছে তাকে। এত লোকের সামনে একটি মেয়ের কাছে মার খাওয়ার অপমানের বদলা তাকে নিতে  হবে। রাগে তার মুখ একদম লাল।

ছেলেটি হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে মেয়েটিকে মারার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঘুসি মেয়েটির  নাকে লাগার ঠিক আগ মুহুর্তেই ধুম করে একটা শব্দ হল। কোন জিনিস উড়ে গিয়ে কোথাও ধাক্কা খেলে এরকম শব্দ হয়। রুহান সাইড থেক উড়ে এসে একটা কর্ণার কিক দিয়েছিল ছেলেটিকে। সে পড়ে আছে নিচতলার টিভিগুলোর ওখানে। জ্ঞান হারিয়েছে।

বাকি ছেলেগুলো ততক্ষণে পালিয়ে গেছে কেউ কিছু বোঝার আগে। মেয়েটি ঘটনার  আকস্মিকতা কাটিয়ে চোখ উপরে তুলতেই দেখে তাকে বাঁচিয়েছে আর কেউ না তমাল  লোকজন যাকে বলে সুপারমাল। তবে এবারে হিরোর সাথে কথা বলা হয়ে উঠল না তার।  ফেসবুক রিলেসনশিপ স্ট্যাটাস এখনও সিঙ্গেল ওর। এইবার ইন এ রিলেশনশিপ হওয়ার  একটা আশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সে আশা মাঠে মারা গেল। তমাল একশন শেষ করেই উড়ে গেছে।

মেয়েটি যথেষ্ট আকর্ষণীয় হওয়ার পরও সিংগেল কেন তার উত্তর পরে একটি ঘটনায়  জানা যাবে। তো যাই হোক, ঘটনাস্থলে ততক্ষণে জনতার একটা ছোট জটলা তৈরি গেছে।  একজন বলে ওঠল, "জানিস সুপারমালকে আবার দেখা গেছে।" একটি ছোট্ট শিশু তার  মাকে জড়িয়ে ধরে ছিল। সে তার মার কানে কানে বলল, "মা আমি বড় হয়ে সুপারমাল  হব।"

উপরিউক্ত দুই ঘটনার পর সারা শহরে আলোচনার বিষয় একটাই, সুপারমাল। সবচেয়ে বড় আলোচনাটি হয়  ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নামক গ্রুপে। তারা বলে এই সুপারহিরোর  অনেক বুদ্ধি তার মানে সে নিশ্চয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। অন্যদিকে  বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা দাবী করে এত হ্যান্ডসাম একজন পুরুষ  প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়ে পারে না।

ঘুম থেকে উঠে এই আলোচনাটাই রুহান দেখছিল ফেসবুক ঘাটতে ঘাটতে। মনে মনে হাসল  সে। মানুষজন এখনও তার আসল নামটিই জানে না। তাতেই তাকে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বলে দাবী করা শুরু করে দিয়েছে। একটা ভিডিও নজরে আসল  রুহানের যেটা ইউটিউবে শেয়ার হয়েছে। তার উড়ে যাওয়ার দৃশ্য। স্কুলের এক ছাত্র  ভিডিও করে আপলোড করেছে। তাকে নিয়ে একটা পেজও খোলা হয়ে গেছে, "গো অন  সুপারমাল"। রুহান তার তমাল আইডি থেকে সেখানে গিয়ে একটা কমেন্ট করে আসল,  "আমাদের সবার ভিতরেই মাল আছে, কেউ প্রকাশ করতে পারে না, কেউ পারে। আমি  সুপারমাল। আমি তোমাদের সবার প্রতিনিধি। আমি এখন থেকে সবাইকে একটা মেসেজ  দিব। যার ভিতরে যা মাল আছে তা প্রকাশ করতে হবে। আমি সেই অধিকারের জন্য আজীবন যুদ্ধ করে যাব।" এত সস্তা কমেন্ট করে সে নিজেই হাসতে লাগল।

রুহান দিনে দিনে প্রচারমুখী হয়ে যাচ্ছে। এর খারাপ প্রভাবের কথা ভেবেই  রুহানের মা কিশি ওকে বলে গিয়েছিল নিজের ক্ষমতা লুকিয়ে রাখতে। মারা যাওয়ার  সময় কিশি বলেছিল, "বাবা আমার মাথা ছুয়ে বল কখনও নিজের ক্ষমতার কথা কাউকে  জানতে দিবি না"। রুহান কথা দেয়, "জানতে দেব না মা"। এই জন্যেই রুহান নিজেকে  আলাদা করে রাখে। নিজের আসল নাম আর কাউকে বলে না। এখন তমাল আর সুপারমাল  নামেই সে বাইরের জগতে পরিচিত।

সকালে নাস্তা করে মনে পড়ল, আজকে সকালে সিম রেজিস্ট্রেশন করতে যাওয়ার কথা।  বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন না করলে ওর সিম ব্লক হয়ে যাবে। যে যন্ত্রের  মাধ্যেমে ঢাকার অপরাধীদের খবরাখবর সে পায় সেই যন্ত্রটিতে একটি সিম লাগে।  আগে নকল সিম ব্যবহার করত সে। তাতে পরিচয় গোপন থাকত। এখন আর সেটা করা সম্ভব হবে না। এতে বেশ একটা সমস্যায় পরে গেছে সে। একদিকে মাকে দেওয়া কথা, যে কাউকে  নিজের পরিচয় বলবে না; অন্যদিকে সরকারের নিয়ম সঠিক পরিচয়ে সিম রেজিস্ট্রেশন  করতেই হবে। এখন কোন দিকে যাবে সে। মায়ের কথা শুনলে সে হয় খারাপ নাগরিক আর  সরকারের কথা শুনলে হয় খারাপ সন্তান।

কার আগে কার স্থান এই ব্যপারে রুহানের নিজস্ব দর্শন আছে। সে মনে করে,  প্রত্যেক মানুষের কাছে সবার আগে অধিকার তার নিজের, এরপর পরিবার, তারপর  বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ইত্যাদি। এরও পরে সমাজ, দেশ এবং  সবশেষে বিশ্ব। এই রকমভাবে সবকিছুকে আগে থেকে ঠিক করে নিলে সিদ্ধান্ত নিতে  সুবিধা হয়। কারণ পৃথিবী অনেক বড়। এখানে অনেক সমস্যা। মাঝে মাঝে এত সমস্যা  দেখলে মরে যেতে ইচ্ছা করে। ওর মা বেঁচে থাকতে এমন সমস্যার সময় ও মাকে বলত,  "পৃথিবী অনেক বড় মা"। ওর মা ওকে বলত, "তো সেটাকে ছোট করে ফেল"। এখনও রুহান  সেই কথাই মেনে চলে। বড় সমস্যাকে ছোট করে ফেলে।

অনেক ভেবে রুহান ভাল সন্তান ও খারাপ নাগরিক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। জাতীয়  পরিচয়পত্রের ডাটাবেস হ্যাক করে ফেলল সে। কামরাঙ্গীরচরের তার বাসার নিচ তলায়  একটা কম্পিউটার রুম আছে যা আন্তর্জাতিক সুপারহিরো সোসাইটির  সুপারকম্পিউটারের সাথে যুক্ত। প্রতি একমিনিটে সেটা ২৫৬ বিটের একটি সংখ্যার  সব বিন্যাস সমাবেশ মিলিয়ে দেখতে সক্ষম। সেই কম্পিউটার ব্যবহার করে জাতীয়  ডাটাবেসের সিকিউরিটি ভেঙ্গে ফেলতে কোন সমস্যাই হল না। তারপর সেখানে সে তমাল  নামে একটা আইডি তৈরি করল এবং তার নিজের ডিজাইন করা আঙ্গুলের ছাপ প্রবেশ করাল। এই আঙ্গুলের ছাপের আদলে একটা গ্লাভস আছে তার। অদৃশ্য এই গ্লাভসটি পড়লে বোঝা যায়না সে কিছু পড়েছে কিন্তু তার হাতের বদলে গ্লাভসের ছাপ পরে।  নতুন গ্লাভস পরে এবং জাতীয় ডাটাবেস থেকে সদ্য তৈরি করা নকল আইডি ডাউনলোড করে সে সিম রেজিস্ট্রেশনের জন্য মোবাইল ফোন কোম্পানির কাস্টমার কেয়ারের  দিকে রওয়া দিল। ও হ্যাঁ, এই গ্লাভসও কিন্তু গ্যাজেট এন্ড গিয়ার এনে দিয়েছে ওকে।

খুব সহজেই তমাল নামে সে তার সিমটি রেজিস্ট্রেশন করে ফেলল। এতসব কাজ করতে সেদিন আর কিছু করা হলনা। এরমধ্যে তার অপরাধ সনাক্ত করার যন্ত্রে রিপোর্ট আসল সারাদিনে  ২টি খুন, ২০টি ছিনতাই এবং ৫ টি ধর্ষণ হয়েছে ঢাকার রাস্তায়। কিন্তু সিম রেজিস্ট্রেশনে ব্যস্ত থাকায়, কোন অপরাধই ঠেকানো সম্ভব হয়নি তারপক্ষে। নিজের দায়িত্বে অবহেলা করেছে এই ভেবে ভিতরটা হাহাকার করে ওঠল ওর। নিজেকে এই বলে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করল যে সিম রেজিস্ট্রেশন করে  যন্ত্রটিকে চালু না করলে তো ভবিষ্যতের অপরাধও থামাতে পারত না। কাল থেকে  কাজে নেমে পড়বে এই প্রবোধ দিতে থাকল মনকে। মন কিছুতেই বোঝে না সেকথা।

ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে এক মগ কফি নিয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসল রুহান। এখান থেকে  কামরাঙ্গির চরের খোলা আকাশ দেখা যায়। এখনও মন খারাপের রেশটা থাকায় আকাশের  দিকে তাকিয়ে আছে সে। অন্যমনস্কভাবে টিভিটাও ছেড়ে রেখেছে। টিভির খবরে জানালো,  বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা আরও একমাস বাড়িয়ে দিয়েছে। এবার সত্যি একদম ভেঙ্গে পড়ল রুহান। আজকে সিম রেজিস্ট্রেশন করতে না গেলে হয়ত সে কয়েকটা প্রাণ বাঁচাতে পারত। কি হল এত কিছু করে। মিথ্যা পরিচয়পত্র তৈরি করল, নিজের  আঙ্গুলের চাপ পরিবর্তন করল, শেষমেষ সিমটাও রেজিস্ট্রেশন করে ফেলল। কিন্তু  মানুষের প্রতি তার দায়িত্ব পালন করল না। নিজের ক্ষমতার সদব্যবহার করল না।  মহান ক্ষমতার সাথে মহান দায়িত্বও আসে, এই কথাটির সম্মান রাখতে পারল না। সব  কিছুকেই অর্থহীন মনে হচ্ছে এখন। এক বায়োমেট্রিক হতাশা গ্রাস করল তমাল ওরফে  সুপারমালকে।
(... চলবে)


লেখাটি শেয়ার করুন

Share on FacebookTweet on TwitterPlus on Google+