অক্সফোর্ড সামার এইটস

আমাদের ইউনিভার্সিটির বার্ষিক রোয়িং বা দাঁড় টানা প্রতিযোগিতা নাম এটি। খেলাটা অনেকটা আমাদের দেশের নৌকা বাইচের মত। কিন্তু এখানে এক নৌকায় শুধু আটজন বৈঠা টানে। প্রতিযোগিতার নামও তাই সামার এইট'স।

রোয়িং অক্সফোর্ড কেম্ব্রিজের বিশাল ট্রেডিশন। প্রতিবছর লন্ডনের টেমস নদীতে একটা রোয়িং প্রতিযোগিতা হয়। নিজেদের রোয়িং দল ভারী করতে সারা পৃথিবীর সেরা রোয়ারদেরকে দলে ভেড়ায় এই দুই ইউনিভার্সিটি। এদের অনেক খেলোয়াড় আবার অলিম্পিক জয়ী। তো টেমস নদীর প্রতিযোগিতায় স্বাভাবিকভাবে এই দুই ইউনিভার্সিটির দল ফাইনালে যায়। এর আগে টানা তিনবারের চ্যাম্পিয়ন অক্সফোর্ড এ বছর কেম্ব্রিজের কাছে হেরে রানার্স আপ হয়ে গেছে।

সামার এইট হল অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন কলেজের মধ্যে রোয়িং টুর্নামেন্ট। খেলার নিয়ম কানুন প্রথমে আমি কিছুই জানতাম না। এখন একটু একটু বুঝতেছি। টুর্নামেন্টে ছেলেদের সাতটি ডিভিশন ও মেয়েদের পাঁচটি ডিভিশন আছে। সবচেয়ে ভাল দলগুলো খেলে প্রথম ডিভিশনে। প্রত্যেক ডিভিশনে এগারোটি করে দল থাকে। কিবল কলেজের দল ছেলে ও মেয়ে উভয়দের খেলাতেই প্রথম ডিভিশনে আছে।

এই টুর্নামেন্টে একটি দলের নৌকার পিছনে নির্দিষ্ট দূরত্বে অন্য দলের নৌকা অবস্থান নেয়। অর্থাৎ রেসের শুরুতে নৌকাগুলো পাশাপাশি থাকে না সামনা সামনি থাকে। রেসে হার জিত বলে আসলে কিছু নেই। ব্যপার হল একটি দল যদি তাদের সামনের নৌকায় নিজের নৌকা লাগিয়ে দিতে পারে বা বাম্প করতে পারে তাহলে তাদের র‍্যাংকিং এগিয়ে যায়। অর্থাৎ পরের রেসের সময় যাদের নৌকা বাম্প করে তারা সামনে স্থান পায় এবং যারা বাম্পড হল তারা পিছনে স্থান পায়।

খেলার নিয়ম হল একটি দল টুর্নামেন্টে নতুন যোগ দিলে তারা সবার শেষের ডিভিশনের সবার শেষের দল হবে। ফলে রেসিং এর সময় তাদের অবস্থান সবার পিছনে থাকবে। এরপর তাদের কে একটি একটি করে দলকে বাম্প করে নিজেদের অবস্থান এগিয়ে নিতে হবে। এভাবে তারা যখন ডিভিশনের শীর্ষে চলে যাবে তখন তাদেরকে প্রমোশন দিয়ে পরের ডিভিশনে তুলে দেওয়া হবে এবং উপরের ডিভিশনের সবচেয়ে খারাপ দলকে নিচের ডিভিশনে নামিয়ে দেওয়া হবে।

প্রত্যেক বছর চারদিন ব্যপী অনুষ্ঠিত সামার এইট'সে মাত্র চারটি রেস খেলতে পারে একটি দল। ফলে এখানে এক ডিভিশন থেকে অন্য ডিভিশনে যাওয়া অনেক সময়ের ব্যপার। আসলে অক্সফোর্ডের সব প্রক্রিয়াই ধীর গতির।

তবে কোন দল যদি তাদের চারটি রেসের কোনটাতেই বাম্পড না হয় তাহলে তাদের পুরষ্কৃত করা হয়। তারা পুরষ্কার পায় দাঁড়ের ব্লেড। আর কোন দল সব কয়টা রেসে বাম্পড হলে তারা পুরষ্কার পায় চামচ। হা হা। পুরষ্কার না বলে তিরস্কার বলা ভাল।

আমার কলেজ অর্থাৎ কিবলের ছেলেদের ও মেয়েদের প্রথম দল ফার্স্ট ডিভিশনে বাম্প করেওনি। বাম্পড হয়ওনি। তাই তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে। অন্যদিকে ছেলেদের দ্বিতীয় দল থার্ড ডিভিশনে তাদের সামনের দলকে বাম্প করে নিজেদের অবস্থান এগিয়ে নিয়েছে। তবে প্রথম ডিভিশনে নিজেদের শীর্ষ অবস্থান অপরিবর্তিত রেখেছে ওরেল কলেজ।

আমার কোর্স অর্থাৎ নিউরোসায়েন্স এমসি এর চারজন এই টুর্নামেন্টে খেলেছিল। তাদের মধ্যে মারটন কলেজের সামিউল তৃতীয় ডিভিশনে খেলে ব্লেড জিতেছে। এজন্য তার নাম এখন মারটন কলেজের কাঠের ফলকে খচিত থাকবে কলেজের সর্বকালের সেরা রোয়ারদের নামের সাথে। উল্লেখ্য, মারটন কলেজের সেরা দলটিই তৃতীয় ডিভিশনে খেলে।

খেলোয়াড়দের পুরষ্কৃত করার আর একটা সিস্টেম আছে। সেটা হল জয়ী হলের খেলোয়াড়েরা খেলা শেষে কলেজের রোয়িং ক্লাবের লোগো সম্বলিত বিশেষ স্যুট পরতে পারে। খেলা শেষে বাকি সারা বেলাই তারা এই স্যুট পরে ঘুরে বেড়ায়। তাই ঐ স্যুট পরিহিত কাউকে দেখলেই বোঝা যায় সে রোয়িং এ জিতেছে। হা হা অক্সফোর্ড ট্রেডিশন।

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on FacebookTweet on TwitterPlus on Google+