ভার্চুয়াল জগতে প্রাণ-৩ : স্মৃতির উন্মেষ

এভিডিয়ানদের মধ্যে স্মৃতি পরীক্ষা করার জন্য খাদ্য-দ্রব্যগুলোকে কম্পিউটারের কিছু সেলের গ্রীডে বন্টন করা হল। সেল মানে একটা মেমোরি লোকেশন যা তার মধ্যে কতটুকু খারার আছে তা মনে রাখে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন গ্রীডে অবশ্য খাবারের পরিমাণ একটি গ্রেডিয়েন্টে কম বেশী করা হল। অনেকটা নিচের ছবির মত। হালকা রঙের সেলগুলোতে কম খাবার, আর গাঢ় নীলগুলোতে বেশী খাবার। প্রথম প্রজন্মের এভিডিয়ানদের ছেড়ে দেয়া হল গ্রেডিয়েন্টের যে দিকে খারার কম সে দিকে। একটি সেলের পাশের সেলটিতে থাকে তার চেয়ে বেশি খাবার।
 

একই সেলে এভিডিয়ান গুলো নিজেদের একশ প্রজন্ম পার করে দিল। তারা সেখানে খায়, সেখানে মারা যায়। হঠাত এদের কেউ কেউ এমন ভাবে নিজেদের পরিবর্তিত করে ফেলল, যাতে করে তারা পরের সেলটিতে যেতে সমর্থ হ্ল। এই সেলটি আগেরটি থেকে বেশি খাবার ধারণ করে ফলে সেখানে তারা আরো দ্রুত নিজেদের কপি তৈরি করে। হাজার প্রজন্ম পরের কোন প্রজন্মের ক্ষেত্রে দেখা যায় তা সর্বোচ্চ খারার ধারণকারী সেলের দিকে যাচ্ছে। মানে সেদিকেই তার গতিপথ।

এত পজন্ম পরেও এরা কোন এক জায়গায় স্থায়ী হয় না। চলতেই থাকল। বিভিন্ন সেলে হোচট খেতে খেতে গ্রেডিয়েন্টের উচ্চতর দিকে যেতে থাকল অনেক জিগজ্যাগ গতিতে। এসময় এদের কিছু কিছু আগের ও বর্তমান অবস্থানের খাবারের তুলনা করতে পারল, না হলে তো দেখা যাবে সে কিছু সেলেই ঘুরপাক খাচ্ছে। সামনে যাওয়ার জনে তো পিছন কোনটা সেটা মনে রাখা চাই। আর একাজ অবশ্যি বুদ্ধি উদ্ভবের লক্ষণ। কারণ এজন্য এদের নিজেদের অবস্থান বুঝতে হয়, আরো বুঝতে হয় তারা যেদিকে যাচ্ছে তা সঠিক কিনা, সঠিক না হলে পথ বদলে আবার সঠিক পথের দিকে চলা শুরু করতে হয়।

অন্য একটি পরীক্ষায় নেয়া হল একেবারে নতুন এভিডিয়ান যাদের কোন বিবর্তন হয় নি এবং তাদের ছেড়ে দেয়া হল সবোর্চ্চ খারার ধারণকারী সেল খুঁজতে। এক্ষেত্রে সেল গুলোতে কিছু পরিবর্তন আনা হল। সেল গুলোতে যোগ করা হল "এরপর কোন দিকে যেতে হবে" তা নির্দেশিত কিছু প্রোগ্রামিং কোড। কিছু কিছু সেলে আবার এক্সট্রা বৈশিষ্ট্য যোগ করে দেয়া হল যাতে নির্দেশ দেয়া হল এরকম, “আগেরবার যা করেছ তার পুনরাবৃত্তি কর"। বলাবাহুল্য এই এভিডিয়ানদের সেই কোডগুলো বুঝে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন ক্ষমতা ছিল না।

কিন্তু এভিডিয়ানরা প্রজনন করতে করতে কোন এক প্রজন্মে তাদের মধ্যে বিবর্তিত হল ওই কোড গুলো বোঝার ক্ষমতা। সেলগুলোতে থাকা ওই সব নির্দেশ আসলে সিলেক্টিভ প্রেশার তৈরি করেছে যার ফলশ্রুতিই হল এই বিবর্তন। আর ওই কোডের নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন হয় স্মৃতির কারণ আগেরবার যা করেছে তা করতে আগেরবার করা কাজটি মনে রাখতে হবে। এভাবেই এভিডিয়ানদের মধ্যে উন্মেষ হল স্মৃতির।

এই ব্যপারটা জীব জগতের বিবর্তন থেকে মোটেও আলাদা নয়। আর তাই মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের এই সাফল্য দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে জীব-বিজ্ঞানীদেরও। আর এই অর্জনের মাধ্যমে আরও প্রমাণিত হয়, সাধারণ একটা বৈশিষ্ট যার মাধ্যমে শূধু চলার দিক নির্ধারণ করা যায় তার উদ্ভবে প্রয়োজন পড়ে স্মৃতির। সরাসরি কোন জ়ীবের উপর গবেষণা চালিয়ে বোধ হয় এমন একটা পরীক্ষায় সফল হওয়া অসম্ভবই ছিল।

বিবর্তন যে আগেই হয়ে গেছে। এখন তা দেখার উপায় নেই। কিন্তু এভিডিয়ান্রা পরোক্ষভাবেই হলেও বিবর্তন নিয়ে পরিক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তাই তো ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির জীব-বিজ্ঞানী বেন কার যথার্থই বলেছেন, “They're wonderful evolutionary pet”. এভিডিয়ানদের খামারে গবেষাণায় বিবর্তন চাক্ষুষ করা সম্ভব হচ্ছে।

আর এই সকল ডিজিটা জীবের গবেষণার মাধ্যমে যে শুধু বিবর্তনের উপর আলোকপাত করা সম্ভব হবে তাই নয়। এদের ব্যবহার করে তৈরি করা যাবে বুদ্ধিমান কৃত্রিম জীবন।

(চলবে...)

পর্ব-১
পর্ব-২
পর্ব-৪
সুত্রঃ নিউ সায়েস্টিস্ট উইকলিতে (আগষ্ট ২০১০ ইস্যু) প্রকাশিত একটি প্রবন্ধের ভাবানুবাদ।

লেখাটি শেয়ার করুন

Share on FacebookTweet on TwitterPlus on Google+